শ্যামল চন্দ্র রায়::
টিএসসির অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে টিএসসির সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) তে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নামাজের জায়গাকে কেন্দ্র করে একটি মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্মারকলিপি প্রদান করার সময় উপস্থিত ছিলেন, ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, রফিকুল ইসলাম সবুজ, মাহমুদুল হাসান; ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি শেখ মো. আরমান, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদা আকতার তমা; প্রভাতফেরী ও ডিইউ টাইমজের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বিজয়; সাহিত্য সংসদের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ; ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি রজত পাল, সাধারণ সম্পাদক মো: কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিমু পরিবহনের সভাপতি নাদিয়া মোমেন, সাধারণ সম্পাদক তুষার চৌধুরী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির সভাপতি মো: নাজমুস সাকিব, সাধারণ সম্পাদক মো. জুলফিকার রহমান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গৌরব পাল; স্লোগান ৭১ এর সভাপতি মোঃ নাজিম উদ্দিন হাসান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের সভাপতি দিগার মো: কৌশিক, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান এইচ সুমন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির সভাপতি এনায়েত এইচ মনন, সাধারণ সম্পাদক এম এইচ. খান মুন্না; ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি তানভীর হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক আলী নেওয়াজ তুষার; নৃত্য সংসদের সভাপতি আবুজার গিফারী; ডিইমুনার সভাপতি মো: আশিকুল ইসলাম; জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সাগর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক জয় দাস; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসতিয়াক উদ্দিন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট (প্রেসিডেন্ট মেট কাউন্সিল ২০২১-২২) সাইফুল ইসলাম তপু সহ অন্যান্য সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যবৃন্দ।
নির্ধারিত সময় দুপুর দুইটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধন শেষে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিমু পরিবহনের সভাপতি নাদিয়া মোমেন বলেন, আমরা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে যাওয়া, আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার টিএসসির ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা। কেউ নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে গিয়ে ধর্মকে পুঁজি করে জোরপূর্বকভাবে টিএসসির জায়গা দখল করবে সেটি আমরা টিএসসির সংগঠনগুলো কোনোভাবেই মেনে নিবো না। জোর কণ্ঠে বলতে চাই আমাদের টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাণকেন্দ্র। এখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়। সংস্কৃতির চর্চা হয়। সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ হয়। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কাজ হয়। আমাদের টিএসসি আমাদের প্রাণের জায়গা। তাই টিএসসির কোনো জায়গা জোরপূর্বকভাবে দখলের বিপক্ষে অবস্থান করছি।”
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি রজত পাল বলেন, “ধর্মকে ব্যবহার করে টিএসসিকে অস্থিতিশীল করার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো আমাদের বরাবরই বিব্রত করে, ক্ষুদ্ধ করে। কেননা আমরা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস রাখি। আমরা সম্মান করি দেশের সকল মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে। ষাটের দশকেই ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেন উপযুক্ত পরিবেশে মানুষ সংস্কৃতি চর্চা ও ধর্মচর্চা করতে পারে। দুটোকে সমন্বয় করে যারা সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চার মধ্যে ব্যাঘাত ঘটাতে চায় তারা ধর্ম ও সংস্কৃতি দুটোর জন্যই হুমকিস্বরূপ। তাই টিএসসির অসাম্প্রদায়িক উদার পরিবেশ রক্ষা ও সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তি বজায় রাখতে এবং কতিপয় অপশক্তির উত্থান ঠেকাতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদানকালে তিনি (উপাচার্য) টিএসসির সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।