কৃষকের মেয়েই ঢাবি সেরা

111
শেয়ার করুন

শেখ তৌহিদুজ্জামান রাহিক

শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের ইচ্ছাশক্তি একটি অসাধারণ গুণ । যার মাধ্যমে মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে । জীবনে বেঁচে থাকার প্রতি পদে পদে মানুষকে বাধা – বিঘ্নের সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয় । এজন্য মানুষ নানা ধরনের কাজ করে থাকে । কাজের সাফল্যের জন্য মানুষের ইচ্ছাশক্তির গুরুত্বই বেশি।

এবং সেটাই প্রমাণ করলেন সীতাকুণ্ডের সারাজানা আক্তার লিমানা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে সারজানা আক্তার লিমানা।তিনি সীতাকুণ্ড পৌরসভাধীন সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সারজানা নৈর্ব্যক্তিক,লিখিত এবং মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় পেয়েছেন ৮৪ দশমিক ৭৫ নম্বর।তাঁর ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সারজানা সীতাকুণ্ড পৌরসভার দক্ষিণ মহাদেবপুরের চৌধুরী পাড়ার এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা জহরুল আলম পেশায় একজন সাধারণ কৃষক। সারজানার ছোটবেলায় মারা যান মা রুমা আক্তার। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সারজানা ছিলেন বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া সারজানা শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয়, ঢাবির ‘গ’ ইউনিটে ৬১০ তম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ইউনিট থেকে ৭৮তম হয়েছেন।
জানা গেছে, সারজানার ১২ বছর বয়সে মা রুমা আক্তার মারা যান। ছোটবেলা থেকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের এই জায়গায় আসতে হয়েছে তাকে। সারজানা আক্তার লিমানা জানান,তাঁর এই সাফল্যের পেছনে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ছিল। রুটিনমাফিক তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর মনোযোগী ছিলেন। এছাড়া ছিল মৃত মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা।

সারজানা বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া এটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বাবা কৃষি কাজ করতেন। প্রাইভেট পড়া সম্ভব হতো না। তবে পড়াশোনাটা থামেনি প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন পরিবারের কারণে। আমি আজীবন কৃতজ্ঞ এই পরিবারের প্রতি। অষ্টম শ্রেণি থেকে ফাউন্ডেশনটি আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
মেধাবী সারজানা বলেন,আমার স্কুল এবং কলেজের সব শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে হিমেল শর্মা রানা এবং রবিউল হাসান, এই দুই শিক্ষক আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন। বিনামূল্যে আমাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং করেছি প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশনের পরিচালিত কোচিং থেকে। সেখানে কোচিং এর কো-অর্ডিনেটর রাকিব ভাই অনেক পরিশ্রম করেছেন। একজন গার্ডিয়ান হিসেবে আমাদের পাশে ছিলেন তিনি সবসময়।
নবীনদের পড়াশোনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতাম। পরিশ্রম করেছি। আর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করেছি। মহান আল্লাহ আমার যাত্রাকে সহজ করে দিয়েছেন।


শেয়ার করুন

LEAVE A REPLY

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Please enter your comment!
Please enter your name here